Founder

Khan Bahadur Ahsanullah (R.)

সাক্ষরতা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার সঙ্গে সাক্ষরতা আর সাক্ষরতার সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যে দেশের সাক্ষরতার হার যত বেশি সেদেশ তত উন্নত। সাক্ষরতার গুরুত্ব বিবেচনা করে সারা বিশ্ব ১৯৬৬ সাল থেকে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ দিবসটি পালনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষকে আমরা বলতে চাই, সাক্ষরতা একটি মৌলিক অধিকার এবং সর্বস্তরের শিক্ষার ভিত্তি বিদ্যমান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হচ্ছে। বিগত এক দশকে বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়ে ৭৪.৭শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটা আমাদের জন্যে বড়ই আশার সংবাদ।

বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্ব আজ কোভিড-১৯ এর মহামারীর করাল থাবায় জর্জরিত এবং আতঙ্কিত। বিশ্ব আজ থমকে গেছে। থমকে গেছে সকল প্রকার উন্নয়ন। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিশ্ব তথা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই এবারের প্রতিপাদ্য “কোভিড-১৯ সংকটঃ সাক্ষরতা শিক্ষায় পরিবর্তনশীল শিখন শেখানো কৌশল এবং শিক্ষাবিদদের ভূমিকা।”  সেই আলোকে, শিক্ষাবিদদের জন্যে এখন চিন্তা করার সময় এসেছে এবং তা এখনই করতে হবে। কীভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে সবার জন্যে সহজ করা যায় এবং নিরাপদ করা যায়।

বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্যে দূর শিক্ষণ তথা ডিজিটাল ব্যবস্থায় শিক্ষা দান পদ্ধতি গ্রহণ করছে। প্রশ্ন হচ্ছে এর থেকে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী লাভবান হচ্ছে? সকল শিক্ষার্থী এই সুবিধাটা ভোগ করতে পারছে? একেবারেই সহজ উত্তর হচ্ছে “না”। বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির পুরো অংশটিই আজকে এই সুবিধা ভোগ করতে পারছেনা। আমাদেরকে শুধু বক্তৃতা আর সেমিনার নয়, সময় এসেছে শিক্ষাবিদ্দের চিন্তা করার। আর শুধূই চিন্তানয়। এখন সময় এসেছে কাজ করার। কাজ করতে হবে। এখনো সারা বিশ্বের একাংশ নিরক্ষর রয়েছে।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এ বছরের নির্ধারিত প্রতিপাদ্যকে সমানে রেখে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২০ পালনের জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে জুম ওয়েবিনারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে। উক্ত সেমিনারটি মডারেট করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এম এহছানুরর হমান ও সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এর সাধারণ সম্পাদক ড. এস এম খলিলুর রহমান। আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ইউনিসেফ এর ইসিডি স্পেশালিষ্ট জনাব মোহাম্মদ মোহসিন, ডাম হেলথ ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক জনাব ইকবাল মাসুদ ও আহ্ছানিয়া মিশন কলেজের অধ্যক্ষ জনাব মফিজুর রহমান।

উক্ত সেমিনারটির কার্যক্রম শুরু হয় ডাম এর এডুকেশন এন্ড টিভেট সেক্টরের প্রধান জনাব মোঃ সাহিদুল ইসলাম এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে।

সেমিনারের প্রথমেই জনাব শেখ শফিকুর রহমান, কো-অর্ডিনেটর এমএন্ডই, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২০- এর প্রতিপাদ্য বিষয়টি সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২০- কোভিড-১৯ প্রেক্ষিত ও ডামের উদ্যোগ নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় ডাম এর দূর শিক্ষন কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং তা কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এবারের প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনাকালে শিক্ষাবিদ জনাব মোহাম্মদ মোহসিন বলেন “আশির দশক থেকে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তথা ডাম এর প্রেসিডেন্ট জনাব রফিকুল আলম ও আমি একযোগে সাক্ষরতা নিয়ে কাজ করেছি। আমরা কেউই কোন দিন ভাবিনি এভাবে আমাদেরকে সাক্ষরতা দিবস পালন করতে হবে। তিনি বলেন এ ধরনের অবস্থার জন্যে সরকার কিংবা এনজিও কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। এটি আমাদের জন্যে একটি লার্নিং। আগামীতে শুধু কোভিড নয় যে কোন Neo Normal situation এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন শিক্ষকদেরকে এব্যাপারে প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন টেকনোলজির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং আমাদের Platform change করতে হবে। তিনি আরো বলেন আমাদেরকে Alternative system খুজে বের করতে হবে। দূরশিখন ব্যবস্থা আমাদেরকে Review করতে হবে। তিনি ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এ উদ্যোগ এবং সুন্দর উপস্থাপনার জন্যে ধন্যবাদ জানান।”

জনাব ইকবাল মাসুদ, পরিচালক, স্বাস্থ্য সেক্টর, ডাম তার বক্তব্য বলেন, “ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তার জন্ম লগ্ন থেকে শিক্ষা আন্দোলন তথা সাক্ষরতা আন্দোলন নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন শিক্ষা সেক্টর হচ্ছে ডাম এর মেরুদন্ড। এ পর্যন্ত ডাম যতগুলো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছে তার সবগুলি শিক্ষা কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে। তিনি বলেন শিক্ষার সংজ্ঞা এখন পরিবর্তন হয়েছে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত মহামারী হয়েছে তার সবগুলোই মানুষ উতরেছে তার জ্ঞান এবং শিক্ষার প্রয়োগের মাধ্যমে। সময় এসেছে সাক্ষর বা নিরক্ষরতাকেউ তরাবার। আমাদেরকে নিত্য নতুন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে হবে। দূরশিক্ষন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায়নি। আমাদেরকে এখন চিন্তা করতে হবে কিভাবে এর প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়া যায়। দূরশিখনে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকে আমাদের আপডেট করতে হবে। এখনো অনেকে জানেনিনা কিভাবে প্রযুক্তি নির্ভও যন্ত্রগুলো ব্যবহার করতে হয়। যারা একটু প্রবীণ তারা এখনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেননা। নীতি নির্ধারকদের এর সহজ পন্থা বের করতে হবে। এ জায়গাটিতে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে এডুকেশন সেক্টরের।” তিনি শিশুদের একস্ট্রা কারিকুলার একটিভিটিজ এর উপ গুরুত্বারোপ করেন।

জনাব মফিজুর রহমান, অধ্যক্ষ- আহ্ছানিয়া মিশন কলেজ তিনি কলেজে কিভাবে দূরশিক্ষন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা তুলে ধরেন এবং পথ নির্দেশনা প্রদান করেন।

নির্ধারিত আলোচক বৃন্দের আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারীদের জন্যে উন্মুক্ত আলোচনার সুযোগ প্রদান করা হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন।

কোভিড -১৯ সঙ্কটের প্রভাবে আজকে অনেক শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছেন। যদিও এনজিওরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক শিক্ষককে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু প্রাইভেট স্কুলগুলোর শিক্ষকদের অবস্থা আজ করুণ। অনেকে পথে বসেছেন। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে এসব জানছি ও দেখছি। পথশিশুদের জন্যে দিতে পারিনি নিরাপদ বাসস্থান। তারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাটাতো অনেক পরের ব্যাপার।

আলোচনা পর্ব শেষে ভার্চুয়াল সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি ড. এস এম খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক, ডাম বলেন-“সরকার তথা দাতা সংস্থাগুলোর এখনি এগিয়ে আসার সময়। শিক্ষা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে, নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে অর্থের যোগান দিতে হবে। শিক্ষাবিদদের এগিয়ে আসতে হবে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে। শিখন-শিক্ষণ কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে সুবিধাবঞ্চিতসহ সকল শিশু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। প্রি-প্রাইমারি থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সকলেই যাতে নিরাপদ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে। আমাদেরকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একত্রে কাজ করতে হবে। এ কাজগুলো করতে যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা খুজে বের করতে হবে এবং দ্রুততার সাথে তার সমাধান করে একটি সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে সকলের জন্যে।” তিনি অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।